Wednesday, April 11, 2012

মেসির চেয়ে বড় গোল মেশিন


প্রতিদিন ২৪ ডেস্ক
জোসেফ বাইকানমেসি-ভক্তরা অনেকেই ঐকিক নিয়মে আঁক কষছেন। অঙ্কটা এমন: প্রতি মৌসুমে মেসি ৬০ গোল করলে আগামী পাঁচ বছরে করবেন ৩০০ গোল। ১০ বছরে ৬০০, ১২ বছরে...। কোথায় গিয়ে থামবেন মেসি!
৩৮, ৪৭, ৫৩গত তিন মৌসুমে পারফরম্যান্সের গ্রাফটি ক্রমেই
উঁচুতে নিয়ে গেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় এই মৌসুমে শুক্রবার পর্যন্ত ৪৯ ম্যাচে ৫৮ গোল। মেসির এই গোল-ধারাবাহিকতা মনে করিয়ে দিচ্ছে পেলের কথা। কিন্তু কেউ মুখে আনছে না জোসেফ বাইকানের নাম!
ফুটবলের ধারাপাতে বিস্মৃত বাইকানের নামের পাশে আছে ১ হাজার ৪৬৮টি গোল! পেলের গোলের সংখ্যা কিন্তু ১ হাজার ২৮১টি। সেই গোল পেলে করেছিলেন ১ হাজার ৩৬৩ ম্যাচে। বাইকানের এক হাজার ৪৬৮টি গোল এসেছিল ৯১৮ ম্যাচে। ম্যাচপ্রতি গোলের অনুপাতে পেলের চেয়েও তাই অনেক এগিয়ে ২০০১ সালে ৮৮ বছর বয়সে জীবননদীর ওপারে চলে যাওয়া এই ফুটবলার।
বাইকানের এই গোলের হিসাবে অবশ্য আছে প্রীতি ও অতিরিক্ত দলের ম্যাচগুলোও। প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচগুলোকেই যদি হিসাবের মধ্যে নেওয়া হয়, ৫৩০ ম্যাচে গোলের সংখ্যা ৮০৫টি। এই হিসাব দিয়েছে ফুটবলের পরিসংখ্যান রাখার জন্য সুখ্যাত স্বেচ্ছাসেবক সংস্থা আরএসএসএফ (রেক.স্পোর্ট.সকার স্ট্যাটিসটিক্স ফাউন্ডেশন)। অবশ্য পরিসংখ্যানের হিসাবে সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফুটবল হিস্ট্রি অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিক্সের (আইএফএফএইচএস) হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচে বাইকানের গোল ৫১৮টি। এদিক দিয়ে পেলের ৫৪১টি গোলের চেয়ে পিছিয়ে আছেন। তবে আইএফএফএইচএস তাঁকে গত শতকের সবচেয়ে সেরা গোলদাতার সম্মান দিয়েছে গোল্ডেন বলট্রফি দিয়ে। ১৯২৮ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত ক্যারিয়ারে সমগ্র ইউরোপের মধ্যে পাঁচবার সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন বাইকান।
ত্রিশের দশকে অস্ট্রিয়ার ওয়ান্ডার টিম’-এর সদস্য ছিলেন। যদিও জাতীয় দলের হয়ে ১৯টির বেশি ম্যাচ খেলা হয়নি। চেক-অস্ট্রিয়ান বংশোদ্ভূত বাইকান অস্ট্রিয়ার পাশাপাশি খেলেছেন চেকোস্লোভাকিয়া জাতীয় দলেও। এমন নয়, অগুরুত্বপূর্ণ দলের হয়ে খেলে অনায়াসে গোল করেছেন। বাইকান খেলেছেন অস্ট্রিয়ার দুই অন্যতম শীর্ষ দল র‌্যাপিড ভিয়েনা আর স্লাভিয়া প্রাগের হয়ে।
স্লাভিয়ার হয়ে খেলার সময় লোকে গাঁটের টাকা খরচ করে তাঁর অনুশীলনও দেখতে আসত। কারণ, সতীর্থদের চেয়ে আলাদা ছিল বাইকানের অনুশীলনের পদ্ধতি। প্রায়ই অনুশীলনে সার্কাসের বিভিন্ন পারফরম্যান্স করতেন। তার মধ্যে প্রিয় ছিল ক্রসবারের ওপর সারি সারি বোতল রেখে ২০ গজ দূর থেকে বল মেরে সেই বোতল একটার পর একটা ফেলে দেওয়া। ১০টি বোতলের মধ্যে বড়জোর একটি নাকি মিস হতো, এমনই নিখুঁত ছিল নিশানা! ১০.৮ সেকেন্ডে পেরোতে পারতেন ১০০ মিটার দূরত্ব, যেটি সে সময়ের বিশ্বসেরা স্প্রিন্টারদের সেরা সময়ের সঙ্গে তুলনীয়।
আরেকটি গল্প চালু আছে তাঁকে নিয়ে। একবার মাঠে খেলা দেখতে এসেছিলেন বাইকানের মা। প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড় বাইকানকে ফাউল করলে মা নাকি ছাতা নিয়ে তেড়ে গিয়েছিলেন মাঠের মধ্যে। সন্তানকে আঘাত করার অপরাধে ওই খেলোয়াড়টিকে দিয়েছেন বেদম মার!
গল্পগুলোর কতটা সত্যি, কতটা মিথ্যা, সেটি আজ আর জানার উপায় নেই। তবে বাইকান যে ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা গোলস্কোরার ছিলেন, এর মধ্যে কোনো গল্প নেই, আছে শুধু নিরেট পরিসংখ্যান।

No comments:

Post a Comment